নিজস্ব প্রতিবেদকঃ সাভার উপজেলার ভাকুর্তা ইউনিয়ন পরিষদের ১ নং ওয়ার্ডের মেম্বার রহমত আলীর ৪তলা ভবনের ২য় তলায় একটি চোলাই মদ তৈরীর কারখানার সন্ধান পেয়ে অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। বাড়িটিতে তল্লাশী চালিয়ে চোলাই মদ তৈরীর সরঞ্জামাদিসহ ৬০৬ লিটার মদ উদ্ধার করা হয়। এসময় জড়িত থাকার অভিযোগে ২ জনকে আটক করেছে পুলিশ।
মঙ্গলবার (২২ ডিসেম্বর) বিকেলে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তেতুঁলঝোড়া ইউনিয়নের ভরারী নামক গ্রামে সাভার মডেল থানাধীন হেমায়েতপুর ট্যানারী পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ইন্সপেক্টর জাহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে এ অভিযানটি পরিচালিত হয়।
জানাগেছে, তেতুঁলঝোড়া ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ড ভরারী গ্রামে একটি ৪ তলা বিশিষ্ট আবাসিক ভবনে একটি চোলাই মদের কারখানা রয়েছে। এমন একটি গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ট্যানারী ফাড়িঁর ইনচার্জ ইন্সপেক্টর জাহিদুল ইসলাম মঙ্গলবার বিকেলে অভিযান পরিচালনা করলে ভবনটির ২য় তলায় চোলাই মদের কারখানার সন্ধান মেলে। হাতে নাতে তিনজনকে আটক করেন মদের কারখানার সাথে সংশ্লিষ্টতা পেয়ে। উদ্ধার করেন ৬০৬ লিটার চোলাই মদ। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে ভবনের মালিক রহমত আলী। তিনি ভাকুর্তা ইউনিয়ন পরিষদের একজন মেম্বার।

পুলিশ জানায়, ৩টি ড্রাম ও বড় আকারের ১৯টি বালতি ভরতি ৬০৬ লিটার চোলাই মদ উদ্ধার ও মদ তৈরী করার সময় ২ জনকে আটক করা হয়েছে। আটককৃত ভীশন চাকমা ও ফেন্সি চাকমার বিরুদ্ধে পুলিশ বাদী হয়ে একটি মাদকদ্রব্য আইনে মামলা দায়ের করা হবে এবং আগামীকাল বুধবার সকালে তাদের আদালতে প্রেরণ করা হবে।
ভবন মালিক ও ইউপি মেম্বার রহমত আলী জানান,তিনি এ বিষয়ে কিছুই জানেন না। ভবনটিতে সাইফুল ও তার স্ত্রী ফাতেমাকে কেয়ারটেকার হিসেবে রেখেছেন। তারাই দায়িত্ব পালন করেন বলে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। তিনি মাসে একবার এসে রাস্তা থেকেই ফ্লাটের ভাড়া বাবদ প্রায় ১৩/১৪ হাজার টাকা নিয়ে চলে যান। ভাড়াটিয়া চুক্তিনামা কিংবা ভাড়াটিয়ার পরিচয়পত্র সংগ্রহের বিষয়ে প্রশ্ন করলেও কেয়ারটেকারের উপর দায়িত্বে কথা বলেন।

কেয়ারটেকার সাইফুলকে প্রশ্ন করলে বাড়ীর দেখভাল বিষয়ে তিনি জানেন না, জানেন তার স্ত্রী ফাতেমা জানে বলে জানায়। ভাড়া নেয়ার সময় ভীশন চাকমার পরিচয়প্ত্র ও দুই মাসের ভাড়া অগ্রীম দিয়ে তারা ফ্লাটটিতে উঠেছিলেন। বিপুল পরিমান চোলাই মদ প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করার সময়ও তাদের নজরে কেন আসেনি প্রশ্ন করলে বলেন তিনি সকালে অটো চালাতে বের হন ফেরেন গভীর রাতে। এমন কথা বলেই ফাড়ির ইন্সপেক্টর জাহিদুল ইসলামকে বুঝিয়েছেন।
পুলিশ এ কর্মকর্তা সাংবাদিকদেরও এ তথ্য দিলেন।

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান রহমত মেম্বার নিজেও এই ব্যবসায় জড়িত রয়েছে। জনপ্রতিনিধির বাড়িতে কেউ বিরক্ত করবেনা ভেবেই এখানে মদের কারখানাটি চালিয়ে আসছিলো বলে অভিযোগ করেন। এমনকি মেম্বারের বাড়িতে মদের কারখানা হওয়া সত্বেও মেম্বার বা তার কেয়ারটেকারকে পুলিশ সুকোশলে বাচিঁয়ে দিচ্ছে।
ট্যানারী ফাড়িঁর ইনচার্জ ইন্সপেক্টর জাহিদুল ইসলাম বলেন, অভিযানে ৩ জনকে আটক করে ফাড়িতে নিয়ে আসা হয়েছিল। তবে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানতে পারি একজন ওই বাড়িতে বেড়াতে এসেছিল। অপরাধের সাথে যুক্ত নয় বলে দুইজনকে আসামী করে মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে। আটককৃতরা স্বীকার করেছে দীঘদিন ধরে চোলাই মদ বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করতো।
ভবন মালিক একজন জনপ্রতিনিধির বাড়ীতে চোলাই মদ কারখানা কয়েক মাস যাবৎ চলার পরও তিনি কি দায় এড়াতে পারেন? তাকে কিংবা তার কেয়ারটেকারকে আইনের আওয়তায় আনা হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি তদন্তধীন রয়েছে। যদি তাদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায় অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে বলে দায়সারা উত্তর দেন।
এবিষয়ে জানতে চাইলে তেতুঁলঝোড়া ইউপি ৪ নং ওয়ার্ডের মেম্বার আইয়ুব বলেন, চোলাই মদের কারখানার বিষয়ে কিছুই জানেন না।